ঢাকা, ২৩ ফেব্রæয়ারি ২০২০: কক্সবাজার সিএসও এনজিও ফোরাম (সিসিএনএফ), ৫০টি স্থানীয় সংগঠনের একটি জোট, আজ ঢাকা জাতীয় প্রেসক্লাবে “জেআরপি ২০২০ হতে হবে একটি সত্যিকার যৌথ উদ্যোগ: প্রয়োজন একক কর্তৃত্ব এবং স্বচ্ছতা ও স্থানীয় পর্যায়ে জবাবদিহিতা” শীর্ষক একটি সংবাদ সম্মেলন আয়োজন করে, যেখানে অন্যান্য সুশীল সমাজ নেতৃবৃন্দও উপস্থিত ছিলেন। সংবাদ সম্মেলন সঞ্চালনা করেন সিসিএনএফের কোচেয়ার জনাব রেজাউল করিম চৌধুরী এবং মূল বক্তব্য উপস্থাপন করেন সিসিএনএফের কোচেয়ার জনাব আবু মুরশেদ চৌধুরী, কোস্ট ট্রাস্টের যুগ্ম পরিচালক বরকত উল্লাহ মারুফ, ডিজাস্টার ফোরামের নইম গওহর ওয়ারা, এনজিও ফেডারেশন বাংলাদেশের জনাব রফিকুল ইসলাম এবং শরণার্থি ও দুর্যোগ বিশেষজ্ঞ জনাব মোহাম্মদ আবুদল লতিফ। কোস্ট ট্রাস্টের পরিচালক মোস্তফা কামাল আকন্দ স্বাগত বক্তব্য দেন।
উল্লেখ্য যে, রোহিঙ্গা শরণার্থিদের সহায়তার জন্য অর্থসংগ্রহের উদ্দেশ্যে বার্ষিক পরিকল্পনা হিসেবে প্রস্তুত করা জয়েন্ট রেসপন্স প্ল্যান তৈরি করেছে আইএসসিজি (ইন্টার সেক্টর কোঅর্ডিনেশন গ্রæপ)। তাদের তৈরি করা খসড়া দলিলে ২০২০ সালের জন্য অর্থ চাওয়া হয়েছে প্রায় ৮৮৭ মিলিয়ন ডলার। চ‚ড়ান্তভাবে এই দলিল মার্চ মাসে জেনেভা থেকে ঘোষণা করা হবে।
মূল বক্তব্য উপস্থাপনকালে সিসিএনএফের কোচেয়ার জনাব আবু মোরশেদ চৌধুরী কয়েকটি সংশোধনীর প্রস্তাব করে বলেন, জেআরপি একটি চলমান দলিল হতে হবে যাতে সময়ের সাথে প্রয়োজন মতো এতে সংশোধনী আনা যায়। তিনি বলেন, এই দলিলে এক নম্বর অগ্রাধিকার হিসেবে প্রত্যাবাসন রাখতে হবে এবং তা কিভাবে করা হবে তার জন্য আলাদা একটি অধ্যায় থাকতে হবে। তিনি আরো বলেন, বাংলাদেশ সরকার ইতিমধ্যে রোহিঙ্গা ব্যবস্থাপনায় যে অর্থ বিনিয়োগ করেছে তার স্বীকৃতি এই দলিতে থাকতে হবে। তিনি বলেন, পরিবেশ পুনরুদ্ধার, হোস্ট কমিউনিটি, যুব ও কিশোর ইস্যুগুলোর জন্য আলাদা অধ্যায় থাকতে হবে। স্বাস্থ্যখাতে একটি অগ্রাধিকার ইস্যু হিসেবে এতে পরিবার পরিকল্পনা যুক্ত করতে হবে। ইউএনডিপির উদ্যোগে গৃহীত জেলা উন্নয়ন পরিকল্পনা বিষয়ে পরিষ্কার করতে হবে কিভাবে এবং কোথা থেকে এই অর্থ আসবে। তিনি গুরুত্ব দিয়ে উল্লেখ করেন, জেআরপিতে পরিষ্কারভাবে উল্লেখ থাকতে হবে, রোহিঙ্গাদের জন্য সরাসরি ত্রাণ ও অন্যান্য সহায়তার ব্যয় কত হবে, এই কর্মসূচির ব্যবস্থাপনা ব্যয় কত হবে এবং অংশিদারিত্বের জন্য কত ব্যয় হবে এবং সর্বোপরি কিভাবে ক্রমান্বয়ে ব্যবস্থাপনা ব্যয় হ্রাস করা হবে তার উল্লেখ থাকতে হবে যাতে ভবিষ্যতে তহবিল কমে গেলেও মানবিক সহায়তা কর্মসূচি সমানভাবে চলমান থাকে। তিনি আরো বলেন, লোকালাইজেশন টাস্ক ফোর্সের সুপারিশ মতে স্থানীয়করণের কৌশলসমূহ এবং কক্সবাজারে মানবাধিকার ও সুশীল সমাজের উন্নয়নে একটি এনজিও পুলড ফান্ডের ব্যাপারেও এখানে বক্তব্য থাকতে হবে।
সিসিএনএফের কোচেয়ার জনাব রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের অধীনে রোহিঙ্গা মানবিক সহায়তা ব্যবস্থাপনার জন্য একটি একক কর্তৃত্ব থাকতে হবে, যা এই মুহূর্তে একটি জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। তিনি বলেন, জাতীয় টাস্ক ফোর্সে স্থানীয় সংসদ সদস্য ও উপজেলা চেয়ারম্যান এবং স্থানীয় এনজিওদের অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। তিনি প্রস্তাব করেন, কক্সবাজারে আইএসসিজিকে শরণার্থি, ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনারের কার্যালয়ের সাথে সমন্বিত করা দরকার যেখানে জাতিসংঘের ভূমিকা হবে উক্ত কার্যালয়ের পরিকল্পনা, মনিটরিং ও আর্থিক পর্যবেক্ষণের সক্ষমতা বৃদ্ধি করা। তিনি আরো প্রস্তাব করেন, স্থানীয় জনগোষ্ঠী সংক্রান্ত প্রকল্পসমূহ বাছাই করার কাজে জেলা প্রশাসককে যুক্ত করতে হবে এবং গোটা জেলাকেই হোস্ট কমিউনিটি হিসেবে বিবেচনা করতে হবে। তিনি বলেন, অনতিবিলম্বে আইএসসিজিতে স্থানীয় সরকার প্রতিনিধি ও স্থানীয় এনজিওদের স্বচ্ছ ও গণতান্ত্রিক উপায়ে যুক্ত করতে হবে। তিনি প্রস্তাব করেন, রোহিঙ্গা শরাণার্থিরা যাতে নিজেদের মধ্যে মানুষ হিসেবে মর্যাদা বোধ করতে পারে তার জন্য উপযুক্ত আবাসন (প্রিফ্যাব্রিকেটেড হাউজিং), আর্থিক কর্মসূচি ও সম্পূর্ণ শিক্ষার আয়োজন করতে হবে। বিশেষ করে নারী ও যুব জনগোষ্ঠীর জন্য।
ডিজাস্টার ফোরামের নঈম গওহর ওয়ারা বলেন, রোহিঙ্গা মানবিক সহায়তা নিয়ে পরিকল্পনার সময় আমাদের মাথায় রাখতে হবে এই কর্মসূচির ফলে যেন স্থানীয় অর্থনীতি উপকৃত হয়। যেমন, শরণার্থিদের ত্রাণের জন্য চিনি, শুটকি মাছ, লুঙ্গি ইত্যাদি আমদানি না করে স্থানীয় বাংলাদেশি উৎপাদক বা সরকারি মিল থেকে তা সংগ্রহ করা যেতে পারে। তিনি আরো বলেন, রোহিঙ্গা শরণার্থিদের বিষয়ে এখনই একটি জাতীয় নীতি তৈরি করতে হবে, তাদের তৃতীয় কোনো দেশে ধীরে ধীরে প্রত্যাবাসনের সুযোগ করে দিতে হবে এবং এজন্য বিকল্প স্তরের কূটনীতির জন্য সুশীল সমাজকে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।
বরকত উল্লাহ মারুফ বলেন, রোহিঙ্গাদের শরণার্থী হিসেবে আন্তর্জাতিক ভ্রমণ দলিল প্রদান করা হলে তারা অবৈধভাবে আর বাংলাদেশের পাসপোর্ট সংগ্রহের চেষ্টা করবে না।
এফএনবির জনাব রফিকুল ইসলাম বলেন, ৮০% ত্রাণ কার্যক্রম স্থানীয় সংস্থাগুলোর হাতে হস্তান্তর করতে হবে, যার পরিমাণ এখন মাত্র ৪%।
জনাব আব্দুল লতিফ বলেন, জাতিসংঘসহ স্থানীয় বা আন্তর্জাতিক এনজিওসমূহকে সরকারের কাছে দায়বদ্ধ হতে হবে। তিনি বলেন, স্থানীয় বাজারে যেসব উপকরণ পাওয়া যায় তা নিয়ম করে আমদানি করা বন্ধ করতে হবে।
Please Download Related Paper [Bangla Press] [English Press]
Download Position paper [English details] [English-Summary]
Photos
Newslink