কক্সবাজারের আর্থ সামাজিক উন্নয়ন এবং মানবাধিকার সমুন্নত রাখতে সচেষ্ট স্থানীয় নাগরিক সমাজ সংগঠন/এনজিওদের নেটওয়ার্ক কক্সবাজার সিএসও এনজিও ফোরাম (সিসিএনএফ, www.cxb-cso-ngo.org). সিসিএনএফ স্থানীয় ও জাতীয় পর্যায়ে স্থানীয়করণ, শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান প্রচার এবং মানবাধিকার প্রতিষ্ঠায় যথেষ্ট সক্রিয় রয়েছে। ২০১৭ সালের আগস্টে রোহিঙ্গা সংকট শুরুর প্রথম থেকেই সিসিএনএফ মানবিক ত্রাণ কর্মসূচি ব্যবস্থাপনায় স্থানীয়করণ প্রতিষ্ঠার দাবি করে আসছে। এ পর্যন্ত প্রায় ২৩টি বিভিন্ন অনুষ্ঠানের মাধ্যমে সিসিএনএফ স্থানীয়করণের প্রকৃত ব্যখ্যা, রোহিঙ্গা মানবিক কর্মসূচিতে স্থানীয়করণের বর্তমান অবস্থা এবং স্থানীয়করণ প্রতিষ্ঠা সুস্পষ্ট সুপারিশমালা সংশ্লিষ্ট সকলের সামনে তুলে ধরে আসছে। সম্প্রতি বিভিন্ন মাধ্যমে স্থানীয়করণের যে অপব্যাখ্যা বা উদ্দেশ্যমূলক বিভ্রান্তি ছড়ানো হচ্ছে তার বিষয়ে সিসিএনফ’র দৃষ্টি আকৃষ্ট হয়েছে। আমরা মনে করে স্থানীয়করণের অর্থ নিয়ে বিভ্রান্তি কক্সবাজারের স্থানীয় মানুষ, স্থানীয় সরকার, স্থানীয় সরকারের জন্য অপূরণীয় ক্ষতির কারণ হতে পারে এবং রোহিঙ্গা ত্রাণ ব্যবস্থাপনা, তথ্য রোহিঙ্গা সংকটের টেকসই সমাধানকে ঝুঁকির মধ্যে ফেলে দিতে পারে। স্থানীয়করণ নিয়ে বিভ্রান্তি নিরসনে সিসিএনফ নি¤েœাক্ত বিষয়গুলো সকলের অবগতির জন্য তুলে ধরছে:
১. স্থানীয়করণ মানে হলো মানবিক কর্মসূচি ব্যবস্থাপনায় স্থানীয় সরকার, স্থানীয় প্রতিষ্ঠান এবং স্থানীয় মানুষের নিয়ন্ত্রণ। সকল কর্মসূচি পরিকল্পনা, বাস্তবায়ন, মুল্যায়ন হতে হবে স্থানীয় জনগণ, স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠান এবং স্থানীয় সংগঠন দ্বারা। এটিই স্থানীয়করণের মূল কথা। কক্সবাজারের বাস্তবতায় স্থানীয়করণ মানে হলো ত্রাণ কর্মসূচি ব্যবস্থাপনায় স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ, স্থানীয় প্রতিষ্ঠান এবং স্থানীয় জনগণের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা। রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা, তাদের অবাধ চলাফেলার দাবি ইত্যাদির সঙ্গে কোনভাবেই স্থানীয়করণের কোন সম্পর্ক নেই। কেউ কেউ আন্তর্জাতিক সংস্থায় স্থানীয় কর্মীদের নিয়োগকে স্থানীয়করণ বলে বিবেচনা করছেন, তবে কোনভাবেই এটি ঠিক নয়।
২. ত্রাণ ব্যবস্থাপনায় স্থানীয়করণের দাবি তোলা বিরল কোনও বিষয় নয়, স্থানীয়করণের এই দাবি সিসিএনফ’র নিজস্ব মনগড়া কোনও দাবি বা সুপারিশমালাও নয়। স্থানীয়করণ প্রতিষ্ঠা করা বরং জাতিসংঘ এবং বিভিন্ন আন্তর্জাতিক এনজিও’র লিখিত প্রতিশ্রæতি! জাতিসংঘের প্রায় সকল সংস্থা এবং দাতাদের স্বাক্ষরিত গ্র্যান্ড বার্গেইন (২০১৬) নামের প্রতিশ্রæতি এবং শীর্ষস্থানীয় আন্তর্জাতিক এনজিওগুলি (বেসরকারী সংস্থা) স্বাক্ষরিত চার্টার ফর চেঞ্জ (২০১৫) হলো স্থানীয়করণের পক্ষে গুরুত্বপূর্ণ দলিল। এসব দলিলে সুস্পষ্টভাবে বলা হয়েছে যে, মানবিক ত্রাণ কর্মসূচি বাস্তবায়নে স্থানীয়দের নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠা করতে হবে। অথচ একটি গবেষণায় দেখা গেছে যে, রোহিঙ্গা ত্রাণ কর্মসূচির প্রায় ৭০% তহবিল পায় জাতিসংঘ, আন্তর্জাতিক বিভিন্ন এনজিও পায় ২০%, রেডক্রস পায় ৭%, অন্যতিদকে স্থানীয়-জাতীয় এনজিও পাচ্ছে মাত্র ৪%। উল্লেখ্য যে, নেপাল, ফিলিপাইন এবং ফিজিতে কোন বিদেশী সংস্থা সরাসরি মাঠ পর্যায়ে কোনও কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারে না। এসব দেশের আইন অনুযায়ী বিদেশী সংস্থাকে অবশ্যই স্থানীয় সংস্থার মাধ্যমে মাঠ পর্যায়ে কার্যক্রম পরিচালনা করতে হয়। কক্সবাজারে স্থানীয় প্রতিষ্ঠান নেতৃত্বে আসলে স্থানীয়দের কর্মসংস্থান, স্থানীয় পর্যায়ে অর্থের সরবরাহ বাড়বে, পুরো কক্সবাজারই এতে উপকৃত হতে পারে। আর এটাই স্থানীয়করণ দাবির মূল কথা।
৩. ত্রাণ ব্যবস্থাপনায় স্থানীয়দের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা হলে ব্যবস্থাপনার খরচ কমে আসবে ব্যাপকভাবে, কারণ বাইরের প্রতিষ্ঠান বা বিদেশিদের পরিচালনার ব্যয় অত্যধিক বেশি। এটা নিশ্চিত যে, রোহিঙ্গা কর্মসূচিতে বৈদেশিক সাহায্য কমে আসছে, ভবিষ্যতে পর্যাপ্ত অর্থ সাহায্য না থাকলে বিদেশি প্রতিষ্ঠানও থাকবে না। ফলে শেষ পর্যন্ত দায়িত্ব নিতে হবে সরকার আর স্থানীয়দেরকেই। এখন থেকেই তাই পরিকল্পিত প্রস্তুতি প্রয়োজন। এটি বিবেচনা করেই জাতিসংঘ ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্টার ফর পিস এন্ড জাস্টিসকে রোহিঙ্গা কর্মসূচিতে স্থানীয়করণ প্রতিষ্ঠার একটি রূপরেখা প্রণয়নের দায়িত্ব দিয়েছে। উল্লেখ করা যেতে পারে যে, বাংলাদেশের অন্যান্য এলাকাতেও উন্নয়ন ও মানবিক সহায়তার স্থানীয়করণের পরিস্থিতি জানতে জাতিসংঘ অস্ট্রেলিয়ার হিউম্যিানিটারিয়ন এভিাইসরি গ্রæপ এবং বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠান নিরাপদকে দায়িত্ব দিয়েছে।
Please download [Bangla Press Release]
Newslink